শুধু যে ছাতা, তা কিন্তু নয়। টেকনোলজি মাত্রই আমাদের বৃষ্টি থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এই যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, ঘড়ি( ঘড়ি তাও ওয়াটার প্রুফ জোটে) জল লাগলেই এগুলো ডেড। ফলে বৃষ্টি এলে অনেকটা বাধ্য হয়েও মানুষকে শেডে দাঁড়াতে হয়।
বৃষ্টিতে ভিজতে হবে। চোখের পাতার উপর বৃষ্টির জল না পড়লে চোখ খোলে না। বৃষ্টি কেবল ছবি তুলে লোকজনকে দেখানোর জন্য নয়। যদি কেউ বাউণ্ডুলে হতে চায় তাকে আমি বলবো, বৃষ্টি ভেজো। রাতের বৃষ্টি দিনের চেয়েও বেশি সুন্দর। রাস্তাঘাট শুনশান, দুই একটা মোড়ে পুলিশের গাড়ি ঝিমুচ্ছে, মদ পাওয়া যাবে সেই রামগড়। অবশ্য মহিষবাথান ব্রীজের নীচে ঢুঁ মারলে একটা বাংলা জুটলেও জুটতে পারে। বিড়ি পাওয়া যাবে লরি ড্রাইভারদের কাছে।
ইদানিং আমাদের নাগরিক বৃষ্টিবিলাস মুখে মুখেই ছক্কা মারে। অবশ্য এটাও ঠিক, এক দেড় ঘন্টা টানা বৃষ্টি হলে কোলকাতা এক হাত জলের তলায়। ড্রেনের জল, পাকের জল, পুকুরের পচা জল সব এসে পড়বে রাস্তায়। ওই জলে পা ফেললে চুলকানি নিশ্চিত। এটাও বোধহয় একটা কারণ কোলকাতার মানুষের বৃষ্টিবিমুখতার। আমি অবশ্য কোলকাতার মানুষ নই, যে শহরে আমার জন্ম এবং শৈশব সেখানেও ভরা শ্রাবণে সারা শহর তলিয়ে যেত, পচা পুকুরের জল, খোলা পায়খানার জল, আড়া, ডোবার জল সব এসে মিশতো রাস্তায় রাস্তায়। আমাদের ওতে কোনো অসুবিধা ছিল না। পা চুলকাতো, চুলকাক গে। বেশি চুলকালে সর্ষের তেল মেখে নেওয়া যাবে। ফলে কোলকাতার অপদার্থ ড্রেনেজ সিস্টেম বৃষ্টি নিয়ে আমার বাউণ্ডুলেপনাকে থামাতে পারেনি। এখনো বৃষ্টি পড়লেই আমি বেরিয়ে পড়ি রাস্তায়, বাজার থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে রবীন্দ্রপল্লী দিয়ে ভিজতে ভিজতে চলে যাই সেক্টর2 তে। তবে হ্যাঁ, আমি ভিজলেও আমার সিগারেট কিন্তু ভেজে না।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সিগারেট খাওয়ার একটা বিশেষ পদ্ধতি আছে, সবাই জানে না, বাউণ্ডুলেরা জানে...
Comments